এম এ মান্নান :
তাবলীগের আমীর আলহাজ্ব মো. আব্দুর রহমান স্বপ্নে আদেশপ্রাপ্ত হয়ে যুবক বয়সেই তাবলীগ শুরু করেছিলেন। আজও এই তাবলীগের কাজে নিজেকে ব্যপৃত রেখেছেন তিনি। মসজিদে ও বাসায় কিতাবী তা’লীম, পাঁচ কাজ চালু রাখা, কাউকে পেলেই দীনী কথাবার্তা শুনানো যেন তার কাজ। সেই ছোটবেলা থেকে দীনের দাওয়াত দিতে দিতে এটা তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তবে করোনা ভাইরাসের কারণে তাবলীগের এ কাজ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় সম্প্রতি তিনি ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন। ফলে তার মন খারাপ। আগে বিভিন্ন মসজিদে যাতায়াত করতেন, চিল্লার সাথীদের তাশকীল করতেন। ১ চিল্লা, ৩ চিল্লার জন্য এমনকি ৩দিন, ৭দিনের জামাত বের করার জন্য পাড়ায়, মহল্লায় ছুটে বেড়াতেন। মাসতূরা জামাত নিয়ে বাড়ির বাইরে সময় দিতেন। সবসময় প্রাণবন্ত থাকতেন কিন্তু এখন সবই বন্ধ। এখন তার অবস্থা যেন ‘মোল্লার দৌঁড় মসজিদ পর্যন্ত’। বাসা থেকে মসজিদে আসেন, নামাজটা আদায় করে আবার বাসায় ফেরেন। ৬৮ বছর বয়সী এই মুরুব্বী যখন নিউ টেনের ছাত্র, তখন একদিন স্বপ্নে এক বুজুর্গ তাকে কাছে ডাকেন। ডেকে বলেন, তুমি তাবলীগে ঢুকো। দীনের কাজে সময় দাও। পরে প্রশ্ন করে তিনি ওই বুজুর্গের পরিচয় জেনে নেন। তিনি আর কেউ নন, বিশ্ববিখ্যাত বুজুর্গ আবু হামিদ মুহাম্মদ ইবনে মুহাম্মদ আল গাজ্জালী বা ইমাম গাজ্জালী(রহ.)। ইমাম গাজ্জালীর আদেশপ্রাপ্ত হয়ে যুবক বয়সেই আব্দুর রহমান দীনের কাজে মনোনিবেশ করেন। তখন ফুলপুর সরকারি কলেজের পুরাতন ক্যাম্পাস সংলগ্ন ইমাম বখশ মুন্সির বাড়ি ছিল। ওই মুন্সি ছিলেন তাবলীগের একজন মুবাল্লিগ। এই মুবাল্লিগ আব্দুর রহমান সাহেবের বাড়ির পাশ দিয়েই বাসস্ট্যান্ড মসজিদে শব গুজারিতে যাতায়াত করতেন। তাকে তিনি দাদা বলে ডাকতেন। স্বপ্ন দেখার পর থেকে এই দাদার সাথে তিনি বাসস্ট্যান্ড মসজিদে যাতায়াত শুরু করেন। তখন ১৯৬৮ সন যায় যায়। ৩দিন করে সময় লাগাতে থাকেন আব্দুর রহমান। ১৯৭১ সনে পাবনা জেলার সুজানগর থানায় তার প্রথম চিল্লা আদায় হয়। ১ চিল্লা করে তাবলীগে বহু সময় দেওয়া হয়েছে তার। তিনি কথা বলতে পারেন ও ভাল বয়ান করতে পারেন বলে ওইসব চিল্লায় তাকে আমীর বানানো হতো। ফলে তখন থেকেই এলাকায় আমীর সাহেব বলে পরিচিত তিনি। ছোটবেলায় তিনি আমুয়াকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। সেখান থেকে তিনি ৫ম শ্রেণী পাস করেন। এরপর ১৯৬৯ সনে ফুলপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি দেন। আর ফুলপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে ১৯৭২ সনে এইচএসসি ও ১৯৮৮ সনে বিএ পাস করেন। তারপর ফুলপুর মহিলা কামিল মাদরাসার ইবতিদায়ী শাখার ইংরেজি শিক্ষক পদে তিনি তার কর্মজীবন শুরু করেন। কর্মজীবনে ৩ চিল্লা দেওয়ার সুযোগ তার হয়ে উঠেনি। ২০১২ সনে শিক্ষকতা থেকে অবসরপ্রাপ্ত হয়ে ওই বছরই পবিত্র হজ্ব ও ৩ চিল্লা সম্পন্ন করেন। তারপর ২০১৯-২০ সনে এই মুরুব্বি তাবলীগ উপলক্ষে ইন্দোনেশিয়া সফর করেন। ময়মনসিংহের ফুলপুর পৌরসভার দিউ গ্রামে ১৯৫২ সনের ৩০ এপ্রিল তার জন্ম হয়। তার বাবা ছিলেন মরহুম আহমাদ আলী। ব্যক্তিজীবনে তিনি ৪ ছেলে ও ৪ মেয়ের জনক। বর্তমানে তিনি তার সমাজের সভাপতি। ফুলপুর মার্কাজ মসজিদের শূরার সাথী ও দাপ্তরিক লেখালেখির দায়িত্বও তার উপরই। এছাড়া দিউ বায়তুস সালাম জামে মসজিদের সিনিয়র সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। শেষ বয়সে তার কামনা একটাই যাতে ঈমানের সাথে মরণ হয়। এজন্যে তিনি সকলের দোয়াপ্রার্থী।
স্বপ্নে আদেশপ্রাপ্ত হয়ে যুবক বয়সে তাবলীগ শুরু করেছিলেন আমীর আলহাজ্ব আব্দুর রহমান
