এম এ মান্নান
ময়মনসিংহের ফুলপুরে ভিজিএফ চালের কার্ড আনতে গিয়ে নিহত হাফিজ উদ্দিন (৬০)’র নামাজে জানাজা প্রায় ২৮ ঘন্টা পর সম্পন্ন হয়েছে। ৪ জুলাই রবিবার বাদ মাগরিব সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আমুয়াকান্দা বাজার সংলগ্ন পয়ারী রোডে এনামুলের রাইস মিলে তার জানাজা সম্পন্ন হয়। জানাজাপূর্ব সমাবেশে বক্তারা বলেন, ভিজিএফ চালের কার্ড আনতে গিয়ে হাফিজ উদ্দিনের মৃত্যু একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা। তারা দিনমজুর হাফিজ উদ্দিনের পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে আর্থিক ও সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। স্থানীয় মফিজ উদ্দিন একাডেমির পরিচালক আরিফুল ইসলামের সঞ্চালনায় প্রথমে বক্তব্য রাখেন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এড. আবুল বাসার আকন্দ। তিনি বলেন, আমাদের সবাইকে মরতে হবে। কার মরণ কিভাবে হয় জানা নাই। তবে হাফিজ উদ্দিনের এমন একটা মৃত্যুর জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম না। এরপর সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, এটা সম্পূর্ণ অনাকাঙ্খিত ও অনভিপ্রেত একটি মৃত্যু। এর জন্য আমরা কেউই প্রস্তুত ছিলাম না। আমি মরহুমের শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। তাঁর পর বক্তব্য দিতে গিয়ে কেঁদে দেন মেয়র আমিনুল হক। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই জনগণের সেবায় নিয়োজিত আছি। আগে একবার ইউপি চেয়ারম্যান ছিলাম কিন্তু জীবনে এমন ঘটনা আর ঘটেনি।তিনি বলেন, এই মানুষটাকে এভাবে মরতে হবে এটা কেউই আমরা আশা করিনি। আমি যতদিন বেঁচে থাকব হাফিজ উদ্দিনের পরিবারকে নিজের পরিবার মনে করব। এ সময় তিনি আরো বলেন, কে এটা করেছে তা দেখার জন্য আমি প্রশাসনকে অনুরোধ জানাচ্ছি। এরপর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, এমন একটা অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্য আমরা সবাই দুঃখিত। এ সময় তিনি সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা পরিষদ ও মেয়রের পক্ষ থেকে বিশেষ অনুদান ঘোষণা করে হাফিজ উদ্দিনের পরিবারের সদস্যদের জন্য একটি ঘর বরাদ্দ দেওয়ার আশ্বাস দেন। ইউএনওর পর উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউল করিম রাসেল শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে সব সময় তাদের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখবেন বলে আশ্বাস দিয়ে বক্তব্য দেন। তারপর থানা প্রশাসনের পক্ষ থেকে থানার সেকান্ড অফিসার এসআই সুমন বলেন, এ ঘটনা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক ও হতাশাজনক, আবার শিক্ষণীয়ও বটে। যাতে পরবর্তীতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে। সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া এই মাইয়্যেতের পরিবারের পাশে পুলিশ সব সময় থাকবে বলেও তিনি বলেন। সবশেষে বাবার জন্য দোয়া চেয়ে বক্তব্য দেন হাফিজ উদ্দিনের ছেলে জায়নামুল। ঋণের ব্যাপারে তিনি বলেন, বাবার ঋণ রিকশা চালাইয়া অইলেও পরিশোধ করবাম। জানাজায় হাফেজ এমদাদুল হক ইমামতি করেন। এ সময় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান, পৌর কাউন্সিলর মোশাররফ হোসেন ও ইউনুস আলীসহ সকল কাউন্সিলরগণ এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ফুলপুর পৌরসভার পক্ষ থেকে ফুলপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজ মাঠে পূর্বঘোষিত সময় অনুযায়ী ৩ জুলাই শনিবার ঈদ উপলক্ষে ভিজিএফ চালের কার্ড বিতরণ করা হচ্ছিল। কয়েক হাজার জনতা সেখানে হাজির হয়। হাজারো জনতার মত দিনমজুর হাফিজ উদ্দিনও গিয়েছিলেন কার্ড সংগ্রহ করতে। ওখানে কলেজ মাঠ ভরে ভিতরে আর জায়গা না থাকায় কলেজের মূল ফটক বন্ধ করে দিয়ে ছোট একটি দরজা দিয়ে লোকজনকে যাতায়াত করতে দেওয়া হয়েছিল। ওই ছোট দরজা দিয়ে এক সাথে বিপুল পরিমাণ লোক প্রবেশ করতে চাইলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তখন পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এক পর্যায়ে হুড়োহুড়ি ও ধাক্কাধাক্কিতে ওখানের সুষ্ঠু পরিবেশের অবনতি হয় ও হতাহতের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় সাংবাদিক ও পুলিশ সদস্যসহ প্রায় ১০ জন আহত হন। গুরুতর আহত হাফিজ উদ্দিন ও ফিরোজা খাতুনকে ফুলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করলে বেলা দেড়টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাফিজ উদ্দিনের মৃত্যু হয়। নিহত হাফিজ উদ্দিন স্ত্রী ঝর্ণা, ছেলে জায়নামুল, দুই মেয়ে হাসিনা ও হাফসাসহ নাতিনাতনি এবং অনেক গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
ভিজিএফের কার্ড আনতে গিয়ে হাফিজের মৃত্যু একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা – জানাজাপূর্ব সমাবেশে বক্তারা
