জাহিদুল হক মনির
শেরপুরের ঝিনাইগাতি উপজেলার হাতিবান্ধা গ্রামে মালিঝি নদীর উপর নির্মিত স্লুইচগেটটি ১৯৮৮ সালের বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে ভেঙ্গে যায়। এরপর ৩১ বছর গুজরান হলেও সংস্কার করা হয়নি ওই স্লুইচ গেটটি ও এর পাশেই নির্মিত সেতুটি। ফলে প্রায় ১০ গ্রামের শত শত একর জমি বোরো মৌসূমে অনাবাদি পড়ে থাকে। তবে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী যাতায়াত সুবিধার জন্য বিধ্বস্ত স্লুইচগেটের পাশে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশ-কাঠ দিয়ে সংযোগ সেতুর সাথে একটি সাঁকো নির্মাণ করে। বর্তমানে সেটিও নড়বড়ে ও জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ফলে এ পথে যাতায়াতকারীদের চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। মাঝে মধ্যেই ঘটে দূর্ঘটনা। স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবী মালিঝি নদীর হাতিবান্দায় একটি সেতু। এ দাবী এখন এলাকাবাসির প্রাণের দাবীতে পরিণত হয়েছে।
জানা যায়, উপজেলার হাতিবান্দা গ্রামে মালিঝি নদীর উপর ১৯৮৬/৮৭ অর্থ বছরে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল সাত কপাট বিশিষ্ট স্লুইচ গেইট। এর পাশেই নির্মাণ করা হয় একটি সেতু কিন্তু নির্মাণের দেড় বছরের মাথায় ১৯৮৮ সালের বন্যায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের পানির তোড়ে ওই স্লুইট গেটের তিনটি কপাট ভেঙ্গে যায়। সেইসাথে পানির তোড়ে দুই পাশের মাটি ভেসে গিয়ে স্লুইচগেটের পাশে নির্মিত সেতুটিও মাটির রাস্তার সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এভাবে স্লুইস গেট ও সেতুটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়। পরে এলাকাবাসী ওই সংযোগ সেতুটি জোড়াতালি দিয়ে কোন রকমে যাতায়াত ব্যবস্থা চালু রাখেন। দীর্ঘদিন ধরে সরকারিভাবে সাঁকোটির কোনো সংস্কার না হওয়ায় বর্তমানে সেটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ কারণে মিরপাড়া, ধারারপাড়, হাতিবান্দা চকপাড়া, প্রধানপাড়াসহ প্রায় ১০ গ্রামের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ কয়েক হাজার মানুষ ওই ভাঙা ও নড়বড়ে সাঁকোর ওপর দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। এছাড়া এ সেতুর উপর দিয়ে কৃষকদের কৃষিপণ্য, গবাদি পশু, রিক্সা, ভ্যান বা মোটর সাইকেল যাতায়াত করতে পারছে না। যেকোনো সময় সাঁকোটি ভেঙে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে এলাকাবাসি আশঙ্কা করছেন। বর্তমানে স্লুইচ গেটটির লোহার কপাটসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি পরে আছে অযত্ন, অবহেলায়। গেইটটি সংস্কার করলে প্রায় ১০ গ্রামের মানুষের অনাবাদি জমিজমা সেচের আওতায় আনাসহ কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে। স্থানীয়রা জরুরিভিত্তিতে স্লুইচ গেটটি সংস্কার ও একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।
হাতিবান্দা গ্রামের মুদি দোকানদার মো. নজরুল ইসলাম (৪৫) আক্ষেপ করে বলেন, নির্বাচন এলে বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা এ নদীর উপর পুনরায় স্লুইচগেট ও সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিয়ে তাদের কাছে ভোট নেন। কিন্তু নির্বাচনের পর কোন জনপ্রতিনিধি তাদের আর খোঁজ-খবর নেন না। সাঁকোটির স্থলে স্লুইচগেট ও পাকা সেতু তৈরি করে দেওয়া হলে গ্রামবাসীর চলাচলে দুর্ভোগের অবসান হবে।
ওই গ্রামের রিক্সা চালক আব্দুর রহিম (৩২) বলেন, এখানে সেতু না থাকায় রাতে রিকশাটি বাড়িতে নিতে পারি না। ফলে আরেকজনের বাড়িতে রিকশা রাখতে প্রতি মাসে তাকে ৪’শ টাকা গুণতে হয়।
হাতিবান্দা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. নুরুল আমিন দোলা বলেন, আমি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই গ্রামবাসির দাবির প্রেক্ষিতে স্থানীয় সংসদ সদস্যের নিকট বিষয়টি তুলে ধরে আবেদন জানিয়ে আসছি কিন্তু আজও কোন সূরাহা করতে পারিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, স্লুইচগেটটি নির্মাণ করা হলে ওই এলাকাগুলোর আরও প্রায় ১৬০ হেক্টর জমি বোরো চাষাবাদের আওতায় আসবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নব কুমার চৌধুরী বলেন, আগামী অর্থ বছরে পুনরায় স্লুইচগেট নির্মাণ করার কথা রয়েছে।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, মালিঝি নদীর ওপর পাকা সেতু নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে সয়েল টেস্ট (মাটি পরীক্ষা) করা হয়েছে। এখন ডিজাইনের কাজ চলছে। এটি শেষ হলেই ওইস্থানে দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি সেতু নির্মাণ করা হবে।