এম এ মান্নান
ময়মনসিংহের উত্তরে যে ক’টি বড়সভা হয় ফুলপুরের হাটপাগলা বড় মসজিদের ইসলামী মহাসম্মেলন এর মধ্যে অন্যতম একটি। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পুরুষ ও মহিলাদের জন্য ছিল আলাদা পেণ্ডেল। তবে একই পথে এক সাথে পুরুষ ও মহিলাদের চলতে দেখা গেছে। খবর নিয়ে জানা যায়, মহিলাদের পেণ্ডেলে ১০জন মহিলা স্বেচ্ছাসেবকসহ পুরা মজমা’ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রায় দুইশ স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত ছিল। বড় দুটি রাজকীয় তোরণসহ প্রায় ১০টি গেইট নির্মাণ করা হয় এই সভা উপলক্ষে। সভাস্থলের চতুর্দিকে ১ থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে আলোকসজ্জা করা হয়। অনেকে নিজেদের খরচে তাদের বাড়িঘর আলোকসজ্জায় সজ্জিত করেন। মহিলা পেণ্ডেলে প্রজেক্টরের মাধ্যমে বক্তাকে দেখে বয়ান শোনার ব্যবস্থা করা হয়। শুধু তাই নয় পিছন থেকে উত্তমরূপে বয়ান শ্রবণ করা ও সুষ্ঠু সম্প্রচারের লক্ষ্যে পুরুষ-মহিলা উভয়ের পেণ্ডেলে প্রায় ৮টি প্রজেক্টর ব্যবহার করা হয়। ১১ জানুয়ারি শুক্রবার আছর থেকে মসজিদের পূর্বপাশে ময়দানে সভার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। শনিবার ফজর পর্যন্ত চলবে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এতে লক্ষাধিক লোকের সমাগম হয়েছে। এর চতুর্দিকে রয়েছে দোকানপাট ও বাজার। ওইসব বাজারে খাবার সামগ্রী ও ব্যবহার্য্য জিনিসপত্রসহ হেন কোন জিনিস নেই যা পাওয়া যায় না। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের দক্ষ পরিচালনায় সবই ছিল সাজানো-গোছানো। এ সভা উপলক্ষে দেখা গেছে এলাকার ঘরে ঘরে চলছে আনন্দ উৎসব। প্রত্যেকের বাড়িতে বাড়িতে রয়েছে আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের ভীড়। সন্ধ্যার পর পরই রাস্তাঘাটে জ্যাম শুরু হয়ে যায়। পায়ে হেঁটেও যেন চলা মুশকিল। তবে গাড়ি ও মোটর সাইকেল পার্কিংয়ের সুবিধা ছিল । জানা যায়, সাড়ে ৯ শতাংশ জমির উপর বহু আগে প্রতিষ্ঠিত এই হাটপাগলা বড় মসজিদ। এক হিন্দু মহিলা এতে আরো এক একর আটাশি শতাংশ ভূমি দান করেছেন বলে শ্রুতি রয়েছে। গত বছর এমপি থাকাবস্থায় এই বড়সভায় এমপি শরীফ আহমেদ উপস্থিত হয়ে লাখো জনতার মঞ্চে বক্তব্য দিয়েছিলেন এবং মুগ্ধ হয়ে তখন তিনি ৫ লক্ষ টাকা অনুদান ঘোষণা করেছিলেন। এবার তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। প্রধান অতিথি হিসেবে সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী এই সভায় যোগদানের দাওয়াত থাকলেও কাজের চাপে বহু কাঙ্খিত ওই বড়সভায় আসতে পারেননি শরীফ আহমেদ। তার পরিবর্তে তার প্রতিনিধি হিসেবে ফুলপুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগনেতা মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান সভায় বক্তব্য রেখে সাত লক্ষ টাকা অনুদান ঘোষণা করেন। মহতি এই ইসলামী মহাসম্মেলনে বরাবরের ন্যায় এবারও সভাপতিত্ব করেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকার কৃতি সন্তান ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজ ও বিএসবি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত বিশিষ্ট শিক্ষা উদ্যোক্তা লায়ন এম কে বাশার, পি.এম.জে এড। আর সহ-সভাপতি হিসেবে সম্মেলন উপস্থাপনায় ছিলেন, নেত্রকোণা আটপাড়া থানার অফিসার ইন-চার্জ হাটপাগলা গ্রামের কৃতি সন্তান মো. আলী হোসেন। এ সময় সহ-সভাপতি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন, আলহাজ্ব ডা. আব্দুল আজিজ, মো. লুৎফুর রহমান হবি ও অত্র মসজিদের খতীব মাওলানা আবুল কালাম আজাদ। সম্মেলনে কুরআন তিলাওয়াত করেন, আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত ক্বারী বিটিভি, এটিএন বাংলা, আরটিভি ও এনটিভিতে তিলাওয়াতকারী মো. শহিদুল ইসলাম। সম্মেলনে বয়ান করেন, বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের ইমাম ও ভারপ্রাপ্ত খতীব মুফতী মিজানুর রহমান, কুষ্টিয়ার মুফতী আমীর হামজা, গাজীপুর সিটির মাওলানা আবুল বাশার হেলালী প্রমুখ। এছাড়া স্থানীয়দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ছনধরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. উবায়দুল হক এবাদুল্লাহ, মাওলানা আমজাদ হোসেন লায়ালপুরী, হাটপাগলা দারুল উলূম দাখিল মাদরাসার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মৌলভী আব্দুল লতিফ প্রমুখ। মসজিদ কমিটির সদস্যবৃন্দ ও এলাকাবাসী ওই সভা বাস্তবায়নে সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন।
অপরূপ সাজসজ্জায় অনুষ্ঠিত হলো ফুলপুরের হাটপাগলা বড় মসজিদে ইসলামী সম্মেলন
