হাফেজ মাওলানা নোমান আহমাদ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শৈশব, কৈশোর কেটেছে পারিবারিক ধর্মীয় আবহে। পিতা শেখ লুৎফুর রহমান ছিলেন অত্যন্ত আলেমভক্ত ও ধার্মিক ব্যক্তিত্ব। এছাড়া যৌবন বয়সে তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন দুই আলেমের হাত ধরে। তাঁর সরাসরি রাজনৈকিক দুইগুরুই দেওবন্দ পাশ মাওলানা। ফলে আলেমদের সাথে বঙ্গবন্ধুর অন্য রকম এক সুগভীর সম্পর্ক ছিল।
বঙ্গবন্ধুর আত্মীয় সূত্রে দাদা ছিলেন সদর সাহেব হুজুর মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী রাহ.। তিনি যখন লালবাগ মাদরাসার মুহতামিম, তখন শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকার রাজনীতিতে তরুণ নেতা। তিনি ছিলেন সদর সাহেব হুজুরের একান্ত ভক্ত। সপ্তাহে কয়েকবার দাদাকে দেখতে লালবাগে যেতেন। ফলে তৎকালিন ফরিদপুরীর সমসাময়িক অনেক আলেমকে তিনি দাদাজি বলে সম্বোধন করতেন। তাদের সাথে সুগভীর এক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল শেখ মুজিবুর রহমানের। সে ইতিহাসটি অনেকেই লিখেন না। ফলে মাওলানাদের সাথে বঙ্গবন্ধুর এই প্রেমময় সম্পর্ক ও ভালবাসা আড়ালেই রয়ে গেছে।
মাওলানা আতাউর রহমান খান (কিশোরগঞ্জের সাবেক এমপি) তাঁর এক স্মৃতিচারণে লিখেছেন- ‘গাড়ি ইত্তেফাক অফিসের সামনে দাঁড় করিয়ে ড্রাইভার বাদে আমরা সবাই মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী এবং মাওলানা আতহার আলী পেছনে পেছনে গেলাম। তাঁরা খোঁজছিলেন শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনি তখন বড় কোনো নেতা ছিলেন না। তবে ছাত্র নেতা হিসেবে এবং জাতীয় নেতাদের কাছে যাতায়াত করতেন বলে অনেক কিছুই করতে পারতেন। আমরা অফিসের অনেক পিছনে এক রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে দেখতে পেলাম, কয়েকজন লোক গল্পগুজবে মত্ত। আমরা গিয়ে দাঁড়াতেই শেখ মুজিব চেয়ার ছেড়ে হৎচকিত অবস্থায় এগিয়ে এলেন। আর বিস্মিত কণ্ঠে বলতে লাগলেন- আরে, দাদা এখানে! হুযুর আপনি? দাদা এখানে কোনো খবর না দিয়েই সরাসরি উপস্থিত। কোনো দরকার হলে আমাকে একটু খবর দিলেই তো আমি উপস্থিত হতাম।
আতহার আলী রাহ. বললেন, আরে না না, খবর দেয়ার হলে তোমাকে খবরই দিতাম। এখানেই প্রয়োজন। এরপর শেখ সাহেব তাঁর অন্যান্য বন্ধুদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে, সদর সাহেব এবং আতহার আলী সাহেবকে বসালেন। উল্লেখ্য, শেখ মুজিবুর রহমান আতহার আলী সাহেবকে দাদা এবং সদর সাহেবকে দাদাহুজুর বলে সম্বোধন করতেন’। বঙ্গবন্ধুর সেই আদর্শের লালন হোক প্রতিটি সমাজের পরতে পরতে। সমাজ থেকে দূর হোক আলেম বিদ্বেষী মনোভাব। সূত্র: (হযরত ফরিদপুরী (র.)-এর সান্নিধ্যে কিছুক্ষণ, মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী (র.) স্মারক গ্রন্থ, প্রকাশ ১৯৯৯ ইংরেজ।
বঙ্গবন্ধুর শৈশব-কৈশোর কেটেছে পারিবারিক ধর্মীয় আবহে
