এম এ মান্নান
বশির ইবনে জাফরকে আমি চিনি ঢাকা রিপোর্টার্স ক্লাব অডিটরিয়ামে আওয়ার ইসলাম পত্রিকার এক বছরপূর্তি অনুষ্ঠানে। ওই অনুষ্ঠানে আমারও দাওয়াত ছিল। হামদ, না’ত, ক্বেরাত ও মাঝে মাঝে বক্তব্য চলছিল। হঠাৎ শুরু হলো কবিতা আবৃত্তি পর্ব। এই জায়গাটাতে আমারও একটু একটু ধকল ছিল। The Sewing, Twinkle Twinkle Little Star, তিন দিন হতে খাইতে না পাই, রবীন্দ্রনাথের বীর পুরুষ ইত্যাদি কবিতা ছাত্রদের মাঝে মজা করে আবৃত্তি করতে পারতাম। এখন আর এতটা হয়ে ওঠে না। যাক, যে কথা বলছিলাম, বশির ইবনে জাফরের কথা। তিনি সেদিন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্বাধীনতা বিষয়ে অপূর্ব এক কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন। কোন মাদরাসা ছাত্রের এত চমৎকার উচ্চারণ ও আবৃত্তি সেটাই আমার প্রথম শোনা। তাকে দেয়া হয়েছিল আওয়ার ইসলামের ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধি। তার বাসাও ময়মনসিংহ শহরেই। তিনি যাত্রাবাড়ি সংলগ্ন দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ওই দিন থেকে আমি তাকে অত্যন্ত সমীহ করি। ভাইভার মাধ্যমে এই প্রতিভাবান বশির ইবনে জাফরের কলেজ জীবন শেষ হয়েছে। সে বিষয়ে তিনি তার ফেইসবুকে অনুপ্রেরণাদায়ক এক স্ট্যাটাস দিয়েছেন। যা পড়লে মাদরাসা ছাত্রদের প্রতি মানুষের যে অনীহা ভাব রয়েছে তা দূর হবে পাশাপাশি মাদরাসা ছাত্র বনতে আফসোস হবে। এমনকি মাদরাসায় নিজে ভর্তি না হলেও নিজ ভাই বোনকে ভর্তি করার প্রতি জন্মিতে পারে আগ্রহ। তিনি তার ফেইসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, কলেজ জীবনের ইতি এবং একটি চমকপ্রদ দুর্লভ স্মৃতি। ভাইভায় সবাইকে নাম মাত্র একদুটো প্রশ্ন করে ছেড়ে দিচ্ছিলেন দায়িত্বরত দুজন মহিলা শিক্ষিকা। নাম্বার সিটে সবার রোলের পাশে পাঁচের জায়গায় গড়ে ২/৩ গণহারে দিয়ে রেখেছেন, দেখলাম। কেউ পারলেও এই নাম্বার না পারলেও এই নাম্বার। যেন এমনই নিয়ম ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজ কেন্দ্রে। আমার সিরিয়াল আসার ঠিক আগ মূহুর্তে দাঁড়িওয়ালা একজন টিচার যুক্ত হলেন।
ভাগ্যক্রমে আমার ভাইভাটা তার কাছেই পড়লো।
শুরু হলো প্রশ্নের বান–
-জবা ফুল কোন গোত্রের(বায়োলজি রিলেটেড এই একটি মাত্র প্রশ্ন ছিলো)
-তোমার নাম কী?
-নামের অর্থ কী?
-পাঞ্জাবী টুপি দাঁড়ি কেন রেখেছো?
-তুমি হাফেজ?
-তারাবীহ পড়াও?
-কুরআন কবে নাজিল হলো, কতো রমজানে?
-তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিল কবে, কতো রমজানে নাজিল হলো?
-বাবা কী করে?
-জেনারেল লাইনটাও কন্টিনিউ করে নিয়ে আসার পেছনে কারণ কী?
– বাসা কোথায়?
-যাত্রাবাড়ি মাদরাসার বড় হুজুরকে চিনো?
সব প্রশ্নের যথাযথ ইন্টারেস্টিং উত্তর পেয়ে স্যারের ভাষ্য ছিলো
-দোয়া করি মেডিকেলে পড়া তোমার ভাগ্যে আল্লাহ দান করুন।
ফুল নাম্বার দিয়ে দিলাম। (পাঁচে পাঁচ)
যাও। ভালো থেকো আর আমাদের জন্য দোয়া করো।
নিজ আসনে ফিরে আসার পর পেছন থেকে এক সহপাঠির আফসোসমাখা ভাষ্য ছিলো- ‘আহ্! কেন যে হুজুর হলাম না! দোয়া করি বশির ইবনে জাফর মাদরাসা ছাত্রদের মুখ এভাবে উজ্জ্বল করতে আল্লাহ আপনাকে হায়াত দারাজ করুন।
(ছবিতে পুরস্কার গ্রহণ করনেওয়ালাই বশির ইবনে জাফর।)
আহ! কেন যে হুজুর হলাম না!
