এম এ মান্নান
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার ধারা বাজার সংলগ্ন কয়রাহাটি হামিউস সুন্নাহ মাদরাসার পাশে তাদের পারিবারিক গোরস্থানে শেষ শয়ন শুইলেন হাফেজ নাজমুল ইসলাম (৩২)। শুক্রবার বাদ আসর বাড়ি সংলগ্ন মাদরাসা মাঠে তার নামাজে জানাজায় শরীক হতে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা মানুষের ঢল নামে। শেষবারের মত নাজমুলকে একটি নজর দেখার জন্য তার লাশের পাশে ভীড় জমে ওঠে। জানাজাপূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, নাজমুলের প্রিয় উস্তাদ ধারা কুরআনিয়া মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা ফরীদ আহমাদ। তিনি বলেন, মৃতব্যক্তির স্মরণার্থে দোকানপাট বন্ধ রাখা, কালো ব্যাজধারণ, এক মিনিট নীরব থাকা ইত্যাদির কোন প্রয়োজন নেই। বরং নাজমুলের রূহের মাগফিরাতের লক্ষ্যে কুরআন শরীফ খতম ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যেতে পারে। মাঝিয়াইল মাদরাসার নায়েবে মুহতামিম শায়খুল হাদীস আল্লামা নূর আহমাদ নাজমুলকে শহীদী মরা উল্লেখ করে বলেন, গাড়ির নিচে পরে যারা মরে তারা শহীদ।এমনকি হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে বা শুক্রবারে যারা মরবে তাদের কবরের আযাব বন্ধ থাকে। তিনি বলেন, নাজমুল কয়েক কারণে শহীদী মর্যাদা পেতে পারে; আর তা হলো, তিনি একজন হাফেজ, শুক্রবারে মারা গেছেন, গাড়ির নিচে পরে মারা গেছেন ইত্যাদি কারণে হাফেজ নাজমুলকে শহীদ বলা যায়। এছাড়া বিএনপি নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আওয়ামী লীগ নেতা জেলা পরিষদের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক সায়েম, জাহেদুল ইসলাম পাপ্পু, হালুয়াঘাট ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ফিল্ড সুপার ভাইজার আমীর হোসেন, নাজমুলের বাবা জৈন উদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। নাজমুলের বন্ধু তারাকান্দার মাওলানা জাফর আহমাদ বক্তব্য অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। সবার আগে যিনি বক্তব্য রাখেন তিনি হলেন নাজমুলের একান্ত কাছের মানুষ ও সার্বক্ষণিক বন্ধু ধারা তাবিল প্লাজার একাংশের মালিক ব্যবসায়ী নেতা হাফেজ মাওলানা ফয়জুর রহমান রাসেল। রাসেল তার বক্তব্য দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। যেন কিচ্ছু বুঝা যাচ্ছিল না। জানাজায় গিয়ে দেখা হয় নাজমুলের বন্ধু সদ্য বিবাহিত হাফেজ মাওলানা আব্দুল্লাহ, হাফেজ আমিনুল ইসলাম, মাওলানা কেফায়েতুল্লাহ, মাওলানা আব্দুল আজিজ প্রমুখের সাথে। প্রত্যেকেই শুধু চোখ মুছছিলেন। নাজমুলের এক্সিডেন্টের খবরে ধারা বাজার ব্যবসায়ী অঙ্গণসহ ওই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। তার রেখে যাওয়া এতিম শিশু সাত বছরের কন্যা নাফিসা ও ছয় মাসের দুধের শিশু কন্যা সুফফার দিকে তাকিয়ে বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে যায় । টগবগে যুবক হাফেজ নাজমুল ইসলাম ০২ মার্চ ২০১৮ শুক্রবার সকালে রোড এক্সিডেন্টে সড়কে শহীদ হন।নাজমুল ফুলপুর রূপসী গ্রামের বিএনপি নেতা মরহুম এড. জুলমত খানের ভাতিজি মরহুম লিয়াকত খানের ছোট মেয়েকে বিবাহ করেন। ভোর বিহানে ফজরের নামাজ আদায় করে তিনি তার শ্বাশুড়িকে ডাক্তার দেখাতে হালুয়াঘাটের জয়রামকুড়া হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে শ্বাশুড়িকে রেখে মোটর সাইকেলে সোজা চলে যান বাড়ির পাশে লালারপাড় গ্রামে তার ফিশারীতে। ফিশারীর খোঁজ খবর নিয়ে মোটর সাইকেলে তিনি বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। পরে ঢাকা-হালুয়াঘাট মহাসড়কে উঠলে ধারা মুন ফিলিং স্টেশনের সামনে পিছন থেকে ময়মনসিংহগামী নিষ্ঠুর ট্রাক তাকে ধাক্কা দেয়। মাথার উপর দিয়ে ট্রাকের চাক্কা গেলে মারাত্মক রক্তক্ষরণ হয় নাজমুলের। এরপর চিকিৎসার জন্য হালুয়াঘাট উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তিনি ইন্তিকাল করেন। ঘটনাস্থলে আশপাশের লোকজন এসে যখন ভীড় করছিলেন ঠিক তখন নাজমুলের খালাতো ভাই নালিতাবাড়ি সিনিয়র ফাযিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মরহুম মাওলানা হাশমতুল্লাহর বড় ছেলে হালুয়াঘাট শহীদ স্মৃতি ডিগ্রি কলেজের অধ্যাপক মেহেব্বুর রহমান মুকুল সেখানে উপস্থিত। তিনি বলেন, আমি ময়মনসিংহ থেকে কলেজে যাচ্ছিলাম। গাড়ি থামলে একটু নেমে দেখতে গেলাম। গিয়ে দেখি খালাতো ভাই নাজমুল!সে এক অপ্রত্যাশিত ও করূণ দৃশ্য। যা বলার ভাষা নেই। তার আরেক খালাতো ভাই ফুলপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যাপক মোস্তাক আহমাদ বলেন, নাজমুল অত্যন্ত আল্লাহওয়ালা ছিল। বিনয়ী ও নম্র ছিল।
নাজমুলের গ্রামের বাড়ি ৯নং ধারা ইউনিয়নের কয়রাহাটি গ্রামে। পিতার নাম জৈন উদ্দিন। তিনি স্ত্রী, ২ মেয়ে, ৩ ভাই ও ২ বোনসহ অসংখ্য গ্রণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার এক ভাই তিতাস গ্যাস কোম্পানীতে চাকরি করেন। তিনি একজন বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী ছিলেন। ধারা বাজারে তাবিল প্লাজার দ্বিতীয় তলায় মোবাইলের দোকান ছিল তার। ধারা কুরআনিয়া মাদরাসা থেকে তিনি হিফজ সম্পন্ন করেন।
কয়রাহাটি হামিউস সুন্নাহ মাদরাসার পাশে সমাহিত হলেন হাফেজ নাজমুল
