এম এ মান্নান
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭। দিনটি ছিল শুক্রবার। ময়মনসিংহের ফুলপুর বাসস্ট্যান্ড মসজিদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম।তখন সকাল সাড়ে ১০টা বাজে। মসজিদের উত্তর পাশ দিয়ে হাঁটার সময় সুমধুর তিলাওয়াতের শব্দ ভেসে আসছিল। থমকে দাঁড়ালাম। তাকিয়ে দেখি ক্বারী ফজলুর রহমান ফকির। চশমা ছাড়াই তিলাওয়াত করছেন। বুড়া মুরুব্বী মানুষ। খুব ভাল লাগছিল বলে আড়ালে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ শুনছিলাম। আলহামদু লিল্লাহ। এত সুন্দর তার তিলাওয়াত! প্রশংসার যোগ্য। রীতিমত মুগ্ধ হবার মত। আল্লাহ তা’য়ালা তাকে হায়াতে তায়্যিবা দান করুন। ক্বারী ফজলুর রহমান ফকির ফুলপুর উপজেলার ভাইটকান্দি ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে মারা দেওরা গ্রামে ১৯৩৭ সনে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পর গ্রামেই তার বেড়ে ওঠা। আহমাদ আলী, ফজলুল হকরা তার ছোটবেলার খেলার সাথী। কিন্তু এতদিনে তারা আর কেউ নেই। সাথীরা প্রায় সবাই মারা গেছেন। ৮০ বছর বয়সী এই ব্যক্তিটির চলাফেরা এখনও যেন শক্ত নওজোয়ানের মতই। আপন জেঠা মরহুম ইদ্রিস আলী ফকিরের নিকট তার লেখাপড়ার হাতে খড়ি। এরপর কাইচাপুর, কাতুলী, ত্রিশাল, বালিয়া মাদরাসাসহ বিভিন্ন স্থানে বড় বড় উস্তাদের নিকট তিনি পড়াশুনা করেছেন।তিনি আন্তর্জাতিক প্রসিদ্ধ ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় ক্বারী জাকারিয়া (রহ)’র ছাত্র।এছাড়া ক্বারী আফতাব উদ্দিন, ক্বারী তরিকুল্লাহ ও মৌলভী নুরুদ্দীনসহ বিভিন্ন গুণী উস্তাদের নিকট পড়াশুনা করার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। ১৯৬১ সনে তিনি ক্বেরাত পাস করেন।এরপর কিতাবী লাইনে বেশিদূর এগুতে না পারলেও সুন্নাতসহ কুরআনকে ধরে রেখেছেন। বাংলা ১৩৬৬ সনে উপজেলার দেওখালী মাদরাসায় তার বর্ণাঢ্য কর্মজীবন শুরু হয়। বাবা মরহুম চান মিয়া ফকিরের নির্দেশে মাত্র ১১টাকা মাসে চাকরিতে যোগদান করেন। মা ছিলেন অত্যন্ত ভাল মানুষ, মরহুমা সাফজান বিবি।বাবা-মায়ের খুব আদরের সন্তান ছিলেন তিনি। দেওখালীর পর বাঘেধরা ফুরকানিয়া মাদরাসায়, দারাকপুর, নিজগ্রাম মারা দেওরায়, সিংহেশ্বর, ভাইটকান্দি, নাকশি চকবদর ও খরিয়াপাড়া মাদরাসায় ক্বারী পোস্টে খেদমত করেন। খরিয়াপাড়া দাখিল মাদরাসায় ১৯৮৩ সনের ১ জানুয়ারী ক্বারী পোস্টে যোগদান করে ২০১৪ সনের ১৯ ফেব্রুয়ারী ওখান থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তার শিক্ষকতা জীবনে ফলেছে অনেক উন্নত ফসল। প্রিয় ছাত্রদের মধ্যে বাঘেধরার ক্বারী মাইন উদ্দিন, বড় পুটিয়ার ক্বারী নুরুল আমীন ও সিংহেশ্বরের ক্বারী আব্দুর রশিদের নাম তার প্রথমেই মনে পড়ে। ২০১৪ সনে অবসরে যাওয়ার পর ওই বছরই এই ভাগ্যবান পুরুষ একমাত্র সন্তান ফুলপুর মহিলা কামিল মাদরাসার স্বনামধন্য অধ্যক্ষ বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন ফুলপুর উপজেলা শাখার নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মাওলানা শাহ তাফাজ্জল হোসেনের সাথে পবিত্র হজ্বব্রত পালন করেন। হজ্ব করে আসার পর থেকে যেন নামাজ কালাম আর কুরআন তিলাওয়াত ছাড়া তার নেই কোন কাজ। মসজিদ আর কলেজ রোডের নিজস্ব বাসা-ই যেন তার চলাচলের নির্ধারিত জায়গা হয়ে ওঠে। আর তার কাজ হলো সময় পেলেই কুরআন নিয়ে বসে পড়া। যিকির করা, তাসবীহ তাহলীল পাঠ করা, দুরুদ পড়া। বাসস্ট্যান্ডেই তিনি অনেক সময় পাঁচওয়াক্ত নামাজ আদায় করে থাকেন। পথে অসহায়দের দান খয়রাত করতেও দেখা যায় তাকে। ১১ অক্টোবর মঙ্গলবার সাড়ে ১০টার দিকে ফুলপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন আমুয়াকান্দা ব্রিজের পাশে মো. ইদ্রিস আলীর ‘মায়ের দোয়া গার্মেন্টস’-এ তার সাথে টুকটাক কথা হয়। তার ভবিষ্যত চাওয়া-পাওয়া সম্বন্ধে অভিব্যক্তি জানতে চাইলে ব্যক্তিজীবনে অত্যন্ত সুখে আছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আল্লাহর কাছে আমার আর তেমন কোন চাওয়া-পাওয়া নেই। শেষ পর্যন্ত যাতে ঈমানের সাথে মরতে পারি এটাই হলো আমার বড় চাওয়া। আর যতদিন আছি, আল্লাহ রাখবেন, যাতে স্বাস্থ্যটা ভাল থাকে ঠিকমত কুরআন তিলাওয়াত করতে পারি এটুকুই আমার চাওয়া।
I understand how vigariously could be a misspelling of vicariously, but essay writing service its substitution for vigorously puzzles me